প্রবন্ধঃ
করোনাকে অবহেলার ভয়াবহ পরিণাম
—জাহাঙ্গীর আলম।
(১) করোনাভাইরাস জীবনবিধ্বংসী অপ্রতিরোধ্য ঘাতক মহামারির নাম। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের উদ্ভব হয়। আতঙ্কের বিষয় হলো, এই ভাইরাস অতিঅল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থমকে দাঁড়িয়েছে।বৈশ্বিক জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর নগরীতে পরিণত হয়েছে উন্নতবিশ্বের বহুরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষা- চিকিৎস,জ্ঞান -বিজ্ঞান ও আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির মডেল দেশগুলি মহামারি করোনার আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। কোনো ভাবেই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে পারছে না। কার্যকর প্রতিষেধক (ভ্যাক্সিন) আবিষ্কার করে মানব জাতিকে করোনার অভিঘাত থেকে বাঁচাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রাত্রিদিন নিরলস গবেষণা করে চলছেন। আজঅবধি এর কোন নির্ভরযোগ্য ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে পারেন নি। তবুও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছ। অপ্রতিরোধ্য মহামারি থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আক্রান্ত দেশগুলো স্বল্প-দীর্ঘ মাত্রার লকডাউন- কারফিউ ঘোষণা করেছে। এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ। যদিও তাতে করে বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্বের মূল চালিকাশক্তি বিশ্বঅর্থনীতি। এতো কিছুর পরও কোন ভাবে ঠেকানো যায়নি এবং যাচ্ছেনা। এরই মাঝে সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটিতে পৌঁচেছে। মৃতের সংখ্য ছাড়িয়েছে তিন লাখেরও বেশি। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহরের মধ্যে চীনের পরে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতৃের সংখ্যা প্রায় একলাখের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও পনেরো লাখ ছাড়িয়েছে। অব্যাহত ভাবে করোনাভাইরাস সারাপৃথিবীকে গ্রাস কর চলছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশ শতভাগ করোনা মুক্ত থাকলেও খুব ধীরেসুস্থে আমাদের দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ ফেরৎ বাংলাদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার বিস্তার ঘটেছে। বিশেষ করে চীন ও ইতালি থেকে প্রত্যাগত সব যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা যে যার মতো
পরিবার পরিজনের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছে। ঘুরে বেড়িয়েছ জনসাধারণের মাঝে। নীরবে বিস্তার ঘটিয়েছে করোনার। প্রথমদিকে যেখানে করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল তারা কোননা কোন ভাবে বিদেশাগতদের সংস্পর্শে এসেছিল বলে তথ্য প্রমাণ মিলেছে। প্রথম দিকে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীরা ইতালি থেকে করোনাভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছেন। তখন মোটামুটি ভাবে শক্তঅবস্থানে ছিল সরকার। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ । স্বাভাবিক জনজীবনে বিধিনিষেধ আরোপ, গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, সময়োপযোগী সাধারণ ছুটি ঘোষণা, বিক্ষিপ্ত জনচলাচল নিয়ন্ত্রণে রাজপথে সেনাবাহিনী মোতায়েন, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিপণন কেন্দ্র ছাড়া অন্যসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণাকরার পাশাপাশি এক পর্যায় সারাদেশ লকডাউন করা সব কিছুই সরকারের দায়িত্বশীল তৎপরতা ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
এতো কিছুর মাঝেও সময়সময় বেশ বৈপরীত্য পরিক্ষিত হয়েছে। কিছু সময় কোনকোন ক্ষেত্রে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত উপরে উল্লেখিত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গুলোকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। তম্মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে শৈথিল্য প্রদর্শনের নির্দেশ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকার অভিমুখে জড়ো করা, দেশের কাঁচা বাজারে মানুষের ঘেঁষাঘেঁষি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণে করোনবিধি আশানুরূপ না মানা,লকডাউনের মাঝপথে রাষ্ট্রীয় অঘোষিত শৈথিল্য বা গা ছাড়া ভাব, রমজানমাসে ঈদশপিংয়ের জন্য মার্কেট খোলা রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত, মসজিদে গণজামায়েত উন্মুক্ত ঘোষণা করা করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পথকে কয়েক ধাপ অবারিত করার পাশাপাশি সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গুলোকে ম্লান করতে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা রাখে। আমরা বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল জাতি। শৃঙ্খলাবোধ, সচেতনতাবোধ জাতিগত ভাবে আমরা কতটা অর্জন করতে পেরেছি তা সকলের জানা। যে জাতিকে ডাণ্ডাবেড়ী পরানো ছাড়া কোন কাজ হয় না, তাদের কাছ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে করোনার ভয়াবহ দুঃসময়ে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার প্রত্যাশা করা বোকামি ছাড়া আর কি হতে পারে। তা জেনেও এই দুঃসময়ে প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল। জনগণের আবেগের কাছে কর্তব্যপরাযণ রাষ্ট্র হেরে যেতে পারে না। তা উচিতও নয়। রাষ্ট্রকে জাতি ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে গৃহীত সিন্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হয়। তা না হলে উচ্ছৃঙ্খলতা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধিপায়।জাতির এই ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল। তার প্রমাণ বাংলাদেশে গত দশ-পনেরো দিনে করোনার অবাধ বিস্তার। সাম্প্রতিক বাংলাদেশও যেন বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ গুলোর মতো মৃত্যুর উপত্যকায় রূপ নিতে যাচ্ছে। স্বল্প মাত্রায় করোনা টেস্ট করার পরও যে হারে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ হচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ উৎকন্ঠা রয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসচেতন ভাবে চলতে থাকলে একদিন লাশের মিছিলে নিজেও শামিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথবা এই মরণঘাতক করোনা কেড়ে নিতে পারে আমাদের আপনজন-স্বজন-প্রিয়জনদের।তাই আর অবহেলা না করে নিজ দায়িত্বে করোনাবিধি মেনে ঘরে থাকা অাবশ্যক। দুঃখ – দারিদ্র্য এবং ঘনবসতির বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস যদি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন এর ভয়াবহতা কোন মাত্রায় পৌঁছতে পারে এটি অনুধাবন করার মতো লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে এদেশে। তা বুঝতে হলে খুব বেশি দূর যেতে হবে না। সাম্প্রতিক ঈদের কেনাকাটার দিকে তাকালে বুঝা যাবে। দলবেঁধে কোলেপিঠে ও হাতে সন্তান নিয়ে যেভাবে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তাতেই বুঝা যায় এজাতির জন্য কতটা কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জানি, অনেকে বলবেন, মানুষ পেটের দায়ে রাস্তায় বের হয়।
(২) সাধ করে তো আর কেউ জীবনের ঝুঁকি নেয় না। এটি বাস্তব , তবে পুরোটা সত্য নয়। অলি-গলিতে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা কত ভাগ অপর দিকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বিত্তবান মানুষের সংখ্যা কতো? যারা এই দুঃসময়েও জীবন বাচানোর চেয়ে ভোগবিলাসকে প্রাধান্য দিচ্ছে তাদের উদ্দেশে কী বলববেন? তারাও শুধু নিজের ক্ষতি করছে না, এক্ষতি আপনার, আমার, সবার। তবুও বলবো,ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে তা নিয়ে না ভেবে এখন থেকে লাগাম টেনে ধরা উচিৎ। যেখানে যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ততোটা কঠোর হতে দিন। তবে কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রতিও খেয়াল রাখা আবশ্যক।মনে রাখতে হবে, পেটে দিলে পীঠে সয়। মানুষ যদি খেতে না পায়, মানুষের ঘরে যদি খাদ্যের তীব্র অভাব থাকে তখন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নেবে। জীবন্ত সত্য কথা হলো, প্রয়োজন আইন মানে না। তাই দুস্থ, গরীব, অভাবগ্রস্ত, খেটে খাওয়া মানুষের ঘরেঘরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। তা যেন লোক দেখানো বা নামসর্বস্ব বিক্ষিপ্ত ভাবে না হয়। এজন্য বাস্তবতার নিরীখে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এদেশের জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র জাতির কাছে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় দুর্দিনে নেতাদের মূল্যবান চরিত্র জাতির কাছে উন্মোচিত হওয়ার মহেন্দ্রক্ষণ। এদের সংখ্যা এতো বেশি যে দু’চার জন ভালো নেতা তাদের কাছে ধোপে টেকে না।যেমনটি অবাক বিস্ময়ে দেখেছে জাতি, করোনাকালে সরকারি ত্রাণ চুরি, দুস্থ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রির পাঠানো ঈদউপহারের টাকা আত্মসাৎ করতে মোবাইল নাম্বার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। এখন আসি করোনার ভয়াবহতা বিষয়ে। আমরা এতদিনে জেনে গেছি যে, এটি এমন একটি ভাইরাস যা নিজে থেকে বিনষ্ট বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে না।এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে শিশু – কিশোর বয়সীরা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।করোনাভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিক্যল মাস্ক সাহায্য করে। তবে এটার ব্যবহারই এককভাবে সংক্রমণ হ্রাস করতে যথেষ্ঠ নয়। নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায়। যে কোন বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এটি মানবসৃষ্ট। মানুষের সীমালঙ্ঘনের ফল। এক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার বিধান লঙ্ঘনকারীদের কথাই বারবার আলোচনায় উঠে আসে। একই সাথে আলোচনার উপজীব্য হয়ে যাচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে উল্লেখিত মানবজাতির খাদ্যাভ্যাসের বিধিনিষেধ এবং ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর শিক্ষা ও ভবিষৎবাণী। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতির জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও অবধারিত করেছেন। যে প্রাণীর দেহে মানুষের জন্য কল্যাণকর উপাদান রয়েছে সেসব প্রাণী গোটা মানবসম্প্রদায়ের জন্য হালাল করেছেন। যে সব প্রাণীর শরীরে মানুষের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে সেসব প্রাণী মনবমণ্ডলির জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু কিছু অবাধ্য মানুষ নিজেদের নোংরা রুচির পরিচয় দিয়ে এমন কোন প্রাণী নেই যে তারা ভক্ষণ করে নি। অল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য তাদের উপর নেমে এসেছে ভয়াবহ মহামারি। যা এখন ক্রমান্বয়ে গোটা মানবজাতির জন্য প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় চৌদ্দশত বছর পরে সমস্যাসংকুল বিভাজিত মানবজাতি সংকটাপন্ন অবস্থায় আবারও প্রমাণ হয় ইসলাম শান্তির ধর্ম। কল্যাণের ধর্ম। মুক্তির ধর্ম। করোনাভাইরাসের সাথে কিছুদিন আগেও মানুষ পরিচিত ছিলো না। কারণ, এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। সাম্প্রতিককালে করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে আতংকিত করে তোলার পাশাপাশি একে অপরের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। সদা পরিবর্তনশীল করোনাভাইরাস কতটা বিপজ্জনক? নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? তাই এ ভাইরাস হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এমন আশংকা রয়েছে। কিন্তু এ ভাইরাসটির প্রকৃতি এবং কীভাবেই বা তা রোধ করা যেতে পারে – এ সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীরা বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে – যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ।বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সতর্কতা প্রয়োজন।এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া। মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেয়া। সামাজিক দূরত্ব এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখ।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। মুখ -হাত ধৌত করা। হাঁচি-কাশীর সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের পৃথক করে আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া।
মজার ব্যাপার হলো প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়লা মানব জাতিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিধান শিখিয়ে দিয়েছন। হাঁচি ও হাই তোলার সময় হাত দিয়ে নিজের মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে প্রিয় নবী আমাদের শিখিয়ে গেছেন। মুসলিম সম্প্রদায়কে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার আগে ওযু করে পবিত্রতা অর্জন করার বিধান অপরিহার্য করে দিয়েছেন। ইসলাম পবিত্র ধর্ম।এই ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (স.) নিজেই পবিত্রতার প্রতীক।
(২) মহান আল্লাহতায়ালা চিরপবিত্র। তিনি পবিত্রতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তাই বিশ্বকে মহামারির মতো গজব থেকে বাঁচাতে আল্লাহর আনুগত্য ও কুরআনের শিক্ষা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই, এটা বারবার প্রমাণিত। সর্বকালের সেরা মানুষ, সেরা মনীষী, শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক মানবতার মহানশিক্ষক নবী মুহাম্মদ (স.) এর রেখে যাওয়া আদর্শকে একমাত্র অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ করলেই গোটা মানবজাতি সকল প্রকার ভাইরাস ও মহামারি থেকে মুক্তি পেতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আসুন, আমরা যে যেই আদর্শ বা ধর্মের অনুসারী হই না কেন নিজের জীবনকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবসময় সৌন্দর্যের অনুশীলন করি এবং রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। আপনস্বার্থে দেশকে সুরক্ষিত রাখি।
লেখক: প্রভাষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।